মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন
সীমিত লকডাউনের মধ্যে বুধবারও হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গেছেন। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী, গাবতলী-আমিনবাজার এবং উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর রুট দিয়ে হেঁটে, রিকশায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে চড়ে তারা ঢাকা ছেড়ে যায়। এদিকে বাস বন্ধ রেখে অফিস চালু রাখায় গত কয়েকদিনের মতো বুধবারও অফিসগামী মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে রিকশায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলে কর্মব্যস্ত মানুষকে চলাচল করতে দেখা গেছে। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা নির্বিঘ্নে চলাচল করেছেন। আর যাদের ব্যক্তিগত বাহন নেই, তারা রিকশায় অফিসে যাওয়া-আসা করেছেন। তবে তাদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।
কুড়িল প্রগতি সরণির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সীমিত পরিসরের লকডাউনের মধ্যেও নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে। রিকশায় যাতায়াত করি। কয়েকদিনের মধ্যে আজ (বুধবার) ভাড়া অনেক বেশি। সরেজমিন গাবতলী টার্মিনাল এলাকায় দেখা যায়, মিরপুরে গত দুদিনের তুলনায় সড়কে যান চলাচল অনেক কম। ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য পরিবহণ তেমন একটা নেই। প্রধান সড়কসহ মহল্লার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের ব্যাপক তল্লাশি থাকায় রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকরা ছিলেন ভয়ের মধ্যে। দুপুর ১২টায় গাবতলী গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটছে মানুষ। যানবাহন না থাকায় হেঁটে কিংবা রিকশায় চড়ে আমিনবাজার পার হচ্ছেন। কোথাও প্রাইভেটকার থামতে দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ।
সাভারে মেয়ের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে সকাল ১০টায় গাবতলী আসেন ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী। যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘করোনাভাইরাস কি গণপরিবহণ, সিএনজি, আর মোটরসাইকেলের হেলমেট থেকে ছড়ায়? লকডাউন কি শুধু মধ্যবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য? বড় লোকের প্রাইভেটকার ঠিকই চলছে। শুধু চলে না গণমানুষের পরিবহণ। অফিস আদালত, গার্মেন্ট খোলা রাখলে কী করোনা ছড়ায় না?’
মোটরসাইকেল চালক দিপু বলেন, ‘আজকে মাত্র ২০০ টাকার ভাড়া খেটেছি। সড়কে মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট। অনেক জরিমানা করা হয়েছে। আর কোনো ভাড়ায় যেতে মনে সায় দিচ্ছে না, বাসায় ফিরে যাব।’
মিরপুর-১ নম্বরে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আজাদ বলেন, ‘গত দুদিনের তুলনায় আজ (বুধবার) সড়কে মানুষ কম। যানবাহনও কম। কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দিচ্ছি না।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা দিয়েও এদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায়। সারাদিনই বিচ্ছিন্নভাবে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রামমুখী হয়েছে মানুষ। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পায়েচালিত রিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও পিকআপে করে ভেঙে ভেঙে সাইনবোর্ডে পৌঁছেন। এখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অন্তত ১৭ জেলামুখে ছুটে যান তারা। গণপরিবহণ সংকট থাকায় কেউ পিকআপে, কেউ মোটরসাইকেলে ও বেশির ভাগ মানুষ মাইক্রোবাসে অতিরিক্ত ৫ গুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্য যাচ্ছেন। কুমিল্লা ও লাকসামের যাত্রী সাইফুল ও সোহেল বলেন, নিউমার্কেট থেকে সাইনবোর্ডে এসেছি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাথাপিছু ২০০ টাকা দিয়ে। এখান থেকে মাইক্রোবাসে ভাড়া চাচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। যদিও বাসে এ ভাড়া ২০০ টাকা। মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, দনিয়া ও শনির আখড়া থেকে অনেকেই পিকআপ, ভ্যানগাড়ি ও রিকশায় সাইনবোর্ড পৌঁছেন।
জানতে চাইলে কাঁচপ–র হাইওয়ে পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সীমিত পরিসরের তিন দিনের ‘লকডাউনের’ দ্বিতীয় দিনে ঢাকাত্যাগী মানুষের চাপ ছিল বেশি। কঠোর লকডাউনের ভয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।’
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ ছিল। সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীরা শিমুলিয়া ঘাটে আসতে থাকে। পুলিশের চেকপোস্ট উপেক্ষা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যটারিচালিত আটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে তারা ঘাটে পৌঁছেন।
ঘরমুখো যাত্রীরা পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত হেঁটে অথবা রিকশায় পৌঁছে। এরপর ভেঙে ভেঙে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য ছোট যানবাহনে শিমুলিয়া ঘাটে যান। এতে চরম ভোগান্তিসহ অধিক ভাড়া গুনতে হয়। তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় পদ্মা পাড়ি দিতে বেশি সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়নি। আর ঢাকামুখী যাত্রীরা বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়ায় ফেরিতে পার হন।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে প্রচণ্ড যাত্রীচাপ ছিল। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এসব যাত্রী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা হতে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন উপায়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছেন। ফেরি পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে একইভাবে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন।